Bitcoin - বিটকয়েন (₿)

Bitcoin - বিটকয়েন (₿)

 

Laksam24News

বিটকয়েন কী.?

বিটকয়েন (₿) বিশ্বের সর্বপ্রথম মুক্ত-সোর্স ক্রিপ্টোকারেন্সি যেটিকে বিকেন্দ্রিক ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে পরিচিতি দেয়া হয়। এখানে লেনদেনের জন্য কোন ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা নিকাশ ঘরের প্রয়োজন হয় না এবং এটি কোন দেশের সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত মুদ্রা নয়। ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামে কোন এক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই মুদ্রাব্যবস্থার প্রচলন করে যা পিয়ার-টু-পিয়ার মুদ্রা বলে অভিহিত হয়।


বিটকয়েনের লেনদেন হয় প্রেরক থেকে সরাসরি প্রাপকের কম্পিউটারে অনলাইনের ভিত্তিতে। এই লেনদেনগুলি সত্যাখ্যান করা হয় ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে এবং প্রকাশ্যে লিপিবদ্ধ করা হয় একটি খতিয়ানে যা সকলের কাছে বিতরিত হয়। এই উন্মুক্ত এবং বিতরিত খতিয়ানকে ব্লকচেইন বলা হয়।বিটকয়েন উৎপাদিত হয় মাইনিং এর মাধ্যমে যেখানে কম্পিউটারের প্রসেসিং ক্ষমতার ভিত্তিতে লেনদেন লিপিবদ্ধ এবং সত্যাখ্যান করা হয়। লেনদেন থেকে মোট কত বিটকয়েন উৎপাদিত হবে তা প্রতি চার বছর পরপর কমে যায়। এভাবে ২১৪০ সাল পর্যন্ত মোট ২,১০,০০,০০০ বিটকয়েন তৈরী হবে এবং পরবর্তীতে আর কোন নতুন বিটকয়েন তৈরী করা হবে না।

বিটকয়েনের লেনদেন সম্পন্ন করতে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন পরে না, এর লেনদেনের প্রারক এবং প্রেপকের বাস্তব পরিচয়পত্র সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য অনুসরণ করা যায় না। বিধায় একাধিক দেশে বিটকয়েন ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে বিটকয়েন ডিজিটাল মুদ্রা, পণ্য বা সেবা আকারে ব্যবহার করা হয়। বৈধ পণ্য লেনদেন ছাড়াও মাদক চোরাচালান এবং অর্থপাচার কাজেও বিটকয়েনের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যদিও বিটকয়েন ডিজিটাল কারেন্সি হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিপরীতে এর দর মারাত্মক ওঠানামা, দুষ্প্রাপ্যতা এবং ব্যবসায় এর সীমিত ব্যবহারের কারণে অনেকেই এর সমালোচনা করেন।

সম্প্রতি কানাডার ভ্যানক্যুভারে বিটকয়েন এর প্রথম এটিএম মেশিন চালু করেছে। মাদক, চোরাচালান অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা ও অন্যান্য বেআইনি ব্যবহার ঠেকানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডীয় সরকার বিটকয়েনের গ্রাহকদের নিবন্ধনের আওতায় আনার চিন্তাভাবনা করছে। কি করে বিটকয়েন কে নিরাপদ করা যায় : হ্যাকার এবং স্ক্র্যামররা হামেশাই বিটকয়েন হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে তাই এটি সবার আগে সুরক্ষিত করা উচিত। যদি আপনি বিটকয়েনে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন এবং কিছু পরিমান বিটকয়েন কিনতে চান তাহলে সব থেকে ভালো হয় বিটকয়েন ওয়ালেট ব্যবহার করা। এখানে দুটি ওয়ালেট এর কথা বলা হলো । i) Ledger nano s :- এটি একটি বিটকয়েন সিকিউরিটি কোম্পানি যা প্রচুর সিকিওর বিটকয়েন স্টোরেজ ডিভাইস দেয়। এটি বর্তমানে সব থেকে সুরক্ষিত ওয়ালেট হিসেবে পরিগণিত। ii)Trezor:- ট্রেজর একটি হার্ডওয়্যার ওয়ালেট। এটি বিটকয়েনের প্রাইভেট কি অফলাইনে প্রদান করে। যেহেতু এই বিটকয়েনের সমস্ত লেনদেন ইন্টারনেটের মাধ্যমেই করা হয় তাই এটি ভীষণ দরকারি। বিটকয়েন মাইনিং এ কি বিনিয়োগ করা উচিত: বিটকয়েন মাইনিং ইন্ডাস্ট্রি বর্তমানে খুব তীব্র গতিতে এগোচ্ছে । আগে এই মাইনিং এর কাজটা ঘরে কম্পিউটার এর মাধ্যমেই করা যেত কিন্তু এখন স্পেশালাইজ ডেটা সেন্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ডেটা সেন্টার গুলি হলো এক একটি ওয়ারহাউস যেখানে প্রচুর কম্পিউটার আছে শুধুমাত্র বিটকয়েন খোঁজার জন্য। বর্তমানে লাভজনক অবস্থায় বিটকয়েন মাইনিং শুরু করার জন্য কয়েক কোটি টাকা লাগে। এবং বিনিয়োগ যে ফেরত আসবেই তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

ইতিহাস

১৮ই আগস্ট ২০০৮ সালে bitcoin.org ডোমেইন নাম নিবন্ধন করা হয়। একই বছরের নভেম্বরে সাতোশি নাকামোতো রচনাকারে বিটকয়েন কি এবং কিভাবে কাজ করে তা প্রকাশ করেন metzdowd.com ওয়েবসাইটের মেইলিং লিস্টে। এরপরে ২০০৯ সালে সাতোশি বিটকয়েনের সোর্সকোড উন্মুক্ত করে সোর্সফর্য নামে একটি প্লাটফর্মে। এই মাসে বিটকয়েন নেটওয়ার্ক সম্প্রচার করা হয় এবং সাতোশি ব্লকচেইনের সর্বপ্রথম ব্লক মাইন করে যা “জেনেসিস ব্লক” নামে স্বীকৃতি পায়। সর্বপ্রথম বিটকয়েন লেনদেন ঘটেছিলো সাতোশি নাকামোতো এবং হাল ফিনি নামক এক ব্যক্তির সাথে। উল্লেখ্য লেনদেনে সাতোশি ১০ বিটকয়েন দিয়ে থাকেন হান ফিনিকে। প্রথম বছরের মধ্যে সাতোশি প্রায় ১০ লক্ষ বিটকয়েন মাইন করেছিলেন। অতঃপর ২০১০ সালে সাতোশি নাকামোতো বিটকয়েন নেটওয়ার্ক কিই এবং বিটকয়েন কোর (সফটওয়্যার ওয়ালেট যেখানে বিটকয়েন সংরক্ষণ করা হয়) এর কোড রিপোজিটরির দখল গ্যাভিন অ্যান্ড্রেসেন নামে এক সফটওয়্যার ডেভেলপার এর কাছে হস্তান্তর করেন। এরপরেই গ্যাভিন অ্যান্ড্রেসেন বিটকয়েন ফাউন্ডেশোনের প্রধান ডেভেলপার হিসেবে পদপ্রাপ্ত হন। উল্লেখ্য বছরের পর থেকে সাতোশি নাকামোতোর আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।


কার্যপ্রনালী

বিটকয়েনের লেনদেন হয় পিয়ার টু পিয়ার বা গ্রাহক থেকে গ্রাহকের কম্পিউটারে। এটি কোন কেন্দ্রীয় নিকাশঘরের মধ্য দিয়ে যায় না কিংবা এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান নেই। বিটকয়েনের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় অনলাইনে একটি উন্মুক্ত সোর্স সফটওয়্যারের মাধ্যমে। বিটকয়েন মাইনারের মাধ্যমে যে কেউ বিটকয়েন উৎপন্ন করতে পারে। বিটকয়েন উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াটা সবসময় অনুমানযোগ্য এবং সীমিত। বিটকয়েন উৎপন্ন হওয়ার সাথে সাথে এটি গ্রাহকের ডিজিটাল ওয়ালেটে সংরক্ষিত থাকে। এই সংরক্ষিত বিটকয়েন যদি গ্রাহক কর্তৃক অন্য কারও একাউন্টে পাঠানো হয় তাহলে এই লেনদেনের জন্য একটি স্বতন্ত্র ইলেক্ট্রনিক সিগনেচার তৈরী হয়ে যায় যা অন্যান্য মাইনার কর্তৃক নিরীক্ষিত হয় এবং নেটওয়ার্কের মধ্যে গোপন অথচ সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষিত হয়। একই সাথে গ্রাহকদের বর্তমান লেজার কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে হালনাগাদ হয়। বিটকয়েন দিয়ে কোন পণ্য কেনা হলে তা বিক্রেতার একাউন্টে পাঠানো হয় এবং বিক্রেতা পরবর্তীতে সেই বিটকয়েন দিয়ে পুনরায় পণ্য কিনতে পারে, অপরদিকে সমান পরিমাণ বিটকয়েন ক্রেতার লেজার থেকে কমিয়ে দেওয়া হয়। প্রত্যেক চার বছর পর পর বিটকয়েনের মোট সংখ্যা পুনঃনির্ধারন করা হয় যাতে করে বাস্তব মুদ্রার সাথে সামঞ্জস্য রাখা যায়।

বিটকয়েনকে অনেকে ফিউচার মানি হিসেবে মনে করছে ।


বৈধতা

বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক থেকে ২০১৪ সালে বিটকয়েন লেনদেনকে অবৈধ বলে ঘোষণা দেয়া হয়। তাদের মতে, "এসব মুদ্রায় লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক বা অন্য কোন নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত নয় বিধায় এসব ভার্চুয়াল মুদ্রার ব্যবহার বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৪৭; সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর দ্বারা সমর্থিত হয় না”।


কিছু সংস্থাগুলি গ্রাহকদের 24/7 অর্থ পরিচালনা করতে সহায়তার জন্য অটোমেটেড ক্রিপ্টোকারেন্সি সমাধান প্রস্তাব করছে। দুর্দান্ত সুবিধা হ'ল মানুষের আবেগকে বাণিজ্য থেকে সরানো হয়। এবং সাধারণভাবে, ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মানুষের আবেগগুলি খুব খারাপ। বিটকয়েন ট্রেডিং বটস অ্যালগরিদমগুলি সাধারণত কোডিংয়ের কিছু অভিজ্ঞতার সাথে ব্যবসায়ীরা ডিজাইন করেন। প্রকৃতপক্ষে, যদিও কেউ কৌশল লিখতে পারে তবে এটি প্রো-ব্যবসায়ীদের দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছে কেবলমাত্র দুটি বাজারের নীচে এবং উভয়কেই প্রতিযোগিতার সুযোগ। ক্রিপ্টো ট্রেডিং বটগুলির মধ্যে Bitcoin Bot বট সর্বাধিক জনপ্রিয়। এটি মূলত বিটিসি মার্কেটের তুলনায় অল্টকয়েনের বাজারের তুলনায় অপেক্ষাকৃত আকারের কারণে। এটি কয়েক বছর অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।


লাকসাম২৪নিউজ/রাকিবুল হাসান

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ